ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা

ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানার আগে কিছু বিষয় জানা উচিত। এলার্জি, হাপানি এবং শ্বাসকষ্ট এই বিষয়গুলি একে অপরের সাথে জড়িত। তাই এলার্জির তীব্রতা বাড়লে এ্যাজমা আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় সাধারণত। অতএব, যারা ঠান্ডা এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন তাদের বিশেষ নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করাই উচিত।


কোনোপ্রকার ঔষধ ছাড়া শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করেও এই সমস্যার তীব্রতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এসব রোগীদের চলাফেরা, ওঠাবসা, খাবার-দাবার এক কোথায় জীবনযাত্রার সকল বিষয়ে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। আর তাই ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে করণীয় এবং বর্জনীয় নিয়ে এই লেখনীতে উপস্থাপন করা হলো।


ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা


ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা;যেসব খাবার ত্যাগ করবেন


ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা ঔষধ গ্রহন এবং ঘরোয়া উপায়ে, দুইভাবেই করা সম্ভব। কোল্ড এলার্জি অন্যান্য রোগের মতো ভয়ংকর রোগ না হলেও এর কারণেই মানুষের সামনে বিব্রত হতে হয় সবচেয়ে বেশি। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে এলার্জি এড়াতে যেসব খাবার পরিহার করবেন সবার আগে, 

  • চিংড়ি
  • ইলিশ মাছ
  • গরুর মাংস
  • দুধ
  • হাঁসের ডিম
  • মিষ্টি কুমড়া
  • কচু
  • বেগুন
  • কলা
  • আপেল

এ সকল খাদ্য আপনার এলার্জি ও শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিবে তাই এসব থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকুন।



এলার্জি মূলত কি?


সংক্ষিপ্ত আকারে এলার্জির পরিচয় জানাটাও দরকার। বলা যায়, ইমিউনসিস্টেমের এক প্রকার অবস্থা হলো এলার্জি। যা কিনা পরিবেশগত বা খাদ্যাভ্যাস-জনিত কারণে মানবদেহে হাইপার-সেনসিটিভিটি রূপে প্রকাশ পেয়ে থাকে।  আর এই এলার্জির বাহ্যিক রূপ সাধারণত শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানো, গোল গোল চাকা দাগ, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহনে সমস্যার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।


ঠান্ডা জনিত এলার্জি কেন হয় ?

যাদের রক্তে এলার্জির পরিমাণ বেশি তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা বা কোল্ড এলার্জি বেশি দেখা যায়। তবে বেশকিছু কারণে বা উপাদানের সংস্পর্শে এলে মানবদেহে এলার্জি বেশ ভালোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। যেমন:


১.বিভিন্ন পশু পাখির লোম।

২.কসমেটিক্স সামগ্রী।

৩.গাড়ি হতে নির্গত ধোঁয়া।

৪.রাস্তার ধুলাবালি

৫. বিভিন্ন ধরনের এলার্জি জাতীয় খাবার যেমন: ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ি, বেগুন, হাঁসের ডিম। এসব খাদ্য গ্রহণ করলে মানবদেহে অ্যালর্জিজনিত সমস্যাগুলো বেশি প্রকট হয়ে ওঠে।

৬.সহ্য হয়না এমন গন্ধ নাকে এলে।

৬.তাছাড়াও বেশিরভাগ সময় লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে,শীতকালের আবহাওয়ায় ঠান্ডা এলার্জির সমস্যা আরো বেশি প্রকোপ হয়।


ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসায় বর্জনীয় বিষয়সমূহ:


সবসময় লক্ষ্য রাখুন কি কি কারণে আপনার এলার্জি, এ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপর সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন কি কি করলে এলার্জি থেকে মুক্তি মিলতে পারে। বর্জনীয় কিছু বিষয় হলো:

  • বংশীয় ভাবে এলার্জি সমস্যা থাকলে বাসা বাড়িতে কার্পেট ব্যবহার না করাটাই  উত্তম।
  • মাথায় ধরে অতি উচ্চ মাত্রার এমনসব সুগন্ধি ব্যবহার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
  • সব প্রকার স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
  • এলার্জি সমস্যা থাকলে বাসা-বাড়িতে বিড়াল, কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণী পোষা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
  • যেকোন রকম স্প্রে করার সময় নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন, মাস্ক পড়ুন।কেননা এটাও বেশ ক্ষতিকর।
  • যে কোনো ভাবেই হোক ধূমপান ত্যাগ করা অপরিহার্য।
  • ঠান্ডা পানি পান এবং ঠান্ডা খাবার গ্রহণ করা সম্পূর্ণ রূপে পরিহার করুন।
  • সব সময় বাসা বাড়ির ফ্রীজে রাখা খাবার ভালো করে গরম করে খাবেন।
  • পুরাতন বই, আসবাব-পত্র, বিছানা কিংবা কার্পেট থেকে ধূলা-বালি ঝাড়া বা মূছার সময় অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন। আর নইলে গামছা দিয়ে মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখুন।
  • শীতকালে নিয়মিত লেপ-তোষক,কম্বল,বালিশ ভাল করে রোদে শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করুন।
  • শীতের সময় পরিধেয় শীত-বস্ত্র,চাদর নিয়মিত ধুঁয়ে ব্যবহার করুন।
  • এলার্জিতে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা শীত থেকে বাচতে উলযুক্ত কাপড়ের পরিবর্তে সুতি অথবা জিন্সের কাপড় ব্যবহার করুন।
  • ছোট বা বড় ফুল ধরা গাছের নিচে বা তার আশেপাশে বসবেন না কেননা ফুলের পাপড়ি এলার্জি রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে তোলে। 
  • ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে রান্না করার সময় মশলার তীব্র ঝাঁঝাঁলো গন্ধ এড়াতে মাস্ক বা শুকনো কাপড় ব্যবহার করবেন।
  • ঘরে যেন তেলাপোকা এবং ছারপোকা বাসা বাধতে না পারে সেদিকে অবশ্যই সজাক দৃষ্টি রাখুন,কেননা ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসায় এটি প্রয়োজনীয়।


ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসায় যেসব পদ্ধতি ফলো করার চেষ্টা করবেন


সাধারণত ডাক্তাররা ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, যেকোনো এলার্জির চিকিৎসা করার চেয়ে এলার্জি প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো। তাই যদি আপনার ঠান্ডা এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে খুজে বের করতে হবে যে, এই এলার্জির উৎস আসলে কোথায়! আর যদি উৎস খুজে না পান তাহলে মেনে চলতে পারেন নিচের নিয়মগুলো:


১.এলার্জীকে কখনোই ভয়, হতাশা ও চিন্তাগ্রস্থ হবেন না,বিষয়টা ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিন।


২.ধূলাবালি থেকে বাচতে রাস্তা-ঘাটে চলাচলের সমসয় মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।


৩.সবসময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুন, নিজের সময়কে এনজয় করুন।


৪.মানসিকভাবে চাঙা থাকতে ভুলে যান আপনি এ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট সমস্যায় ভুগছেন। 


৫.শ্বাস গ্রহনের পরে কমপক্ষে প্রায় পনের সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখার অভ্যাস করুন।


৬.প্রতিদিন কিছু সময় ধরে শ্বাস- প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।


৭.দৈনিক সুযোগ পেলে কিছুটা সময় স্বাভাবিকের চেয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিন।


৮.দুই ঠোট শীষ দেওয়ার ভঙ্গিতে এনে আস্তে-ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।


৯.সবসময় ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন বা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন।


১০. এলার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট তীব্র হলে বা শ্বাসকষ্ট না কমলে আর দেরী না করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


শেষকথা


ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা করতে কোন খাবার বা কোন পরিবেশের কারণে এই এলার্জি সমস্যাগুলো হচ্ছে তা আপনাকে প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে। কারণ খুঁজে বের করে যে সকল সমস্যায় এলার্জি জনিত রোগ হয়ে থাকে সেগুলো সাবধানে এড়িয়ে চলতে হবে।


যদি দেখেন বিভিন্ন খাবার খাওয়ার কারণে এলার্জি হয়ে থাকে তাহলে সে সকল খাবার পরিহার করতে হবে। তাছাড়া রাস্তার ধুলাবালি এবং গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকেও ঠান্ডা এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধান করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments