এলার্জি দূর করার উপায় জানতে লোকজন রকমারী ঔষধ গ্রহন করে থাকে । মানুষ যা বলে তাতেই উপশম খোঁজার চেষ্টা, কেননা এলার্জির যন্ত্রণা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। এলার্জি দূর করতে সুস্বাদু সব খাবার সামনে রেখেও খেতে পারেন না অনেকে,দিনশেষে ভুগতে হয় পুষ্টি-হীনতায়।

এলার্জি দূর করার উপায়; প্রাকৃতিক উপাদান
এলার্জির জন্য নানারকম ঔষধ রয়েছে। সেসব ঔষধ সেবনের পূর্বে নিচের খাদ্যগুলো গ্রহন করলে তাড়াতাড়ি সুফল মিলতে পারে। তাই আজকের লেখনীতে দেওয়া উপায় মেনে চললে সহজেই এলার্জিকে দূর করতে পারবেন সারা জীবনের জন্য। বিস্তারিত জানতে শেষ অব্দি পড়বেন।
নিমপাতা: ১ কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকানো হলে পাটায় পিষে গুঁড়ো করে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি কৌটায় রাখুন। এক চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুঁড়া এবং ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো মতো নাড়ুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে মিশ্রণটি খেয়ে ফেলুন। ২১ দিন একটানা খাওয়ার পর, কার্যকারিতা শুরু হতে ১ মাস লাগতে পারে।
মাশরুম: এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শরীর সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। মাশরুমে ঔষুধ গুণাগুণ সহ আমিষ,শর্করা, মিনারেল ও ভিটামিন উপাদান রয়েছে। মাশরুম মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যা ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার, কিডনি ও এলার্জি সহ বাতের ব্যথা প্রভৃতি জটিল ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি দূর করে থাকে।
এলার্জি দূর করার উপায়; এলোপ্যাথিক ঔষধ
কি কারনে চুলকানি হয়েছে সেটা সঠিকভাবে নির্নয় করতে পারলে সহজেই চুলকানির চিকিৎসা করা যায়।
- চুলকানি দ্রুত কমানোর জন্য চুলকানির স্থানে পেভিসোন মলম লাগান,অল্প কিছু মিনিটের মধ্যেই আপনার চুলকানি কমে যাবে।
- পেভিসোন মলম ব্যবহারের পাশাপাশি সাথে এলাট্রল ট্যাবলেট খাবেন, এটি খেলে কিছুটা ঘুম পেতে পারে।
- চুলকানি এলার্জি-জনিত কারণে হলে খাটি সরিষার তেলে ৬-৭ কোয়া রসুন ছেঁচে দিন এবং তা চুলায় ভাজুন। রসুনের কালার বাদামী হলে নামিয়ে হালকা গরম থাকা অবস্থায় এলার্জি আক্রান্ত জায়গায় মাখুন, আরো ভালো ফলাফল পেতে এলাট্রল ট্যাবলেটও খেতে পারেন।
- ওরাডিন নামের আরেকটি ট্যাবলেট আছে, যা দ্রুত চুলকানি কমাতে ভালো কাজ করে। ওরাডিন খেলে আপনার ঘুম পাবে না। তবে আপনি ওরাডিন বা এলাট্রল এ দুটোর যেটিই খান না কেন, একদিনে একটির বেশি খাওয়া ঠিক না।
এই অংশে আপনাদের জানাবো কয়েক ঘন্টায় চুলকানি সারানোর বেশকিছু ওষুধের নাম:
১. ফেক্সোফেনাডিন
২. সিটিরিজিন
৩. লোরাটিডিন
৪. ডেসলোরাটিডিন
৫. ডাইফেনাহাইড্রামিন
মনে রাখবেন, যে কোন ওষুধ ব্যাবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিজ দায়িত্বে ওষুধ ব্যবহার করে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিবেন না।
কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায়
শীতের হাঁচি ও সর্দির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া খুবই সহজ। যদি সমস্যাটি চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলা যায় তাহলে সমস্যা অনেকাংশ কমে আসবে।
- সকালে বিছানা ছেড়ে ওঠার পর ঠান্ডা ফ্লোরে কিংবা মাটিতে কোনো অবস্থাতেই খালি পায়ে হাঁটা ঠিক হবে না। বিশেষত যারা খালি পায়ে হেঁটে অভ্যস্ত নন এবং ঠাণ্ডা পরিবেশে কম গেছেন,তাদের বেলায় এ সমস্যা বেশি হয়।
- শীতের সকালে বাচ্চাদেরকে কোল্ড এলার্জি থেকে দূরে রাখতে গরম কাপড়ের সঙ্গে মাথায় ক্যাপ এবং পায়ে মোজা পরাতে পারেন।
- নাকের ছিদ্র বন্ধ হলে নাকের ড্রপ, যেমন- এন্টাজল, রাইনোজল, নোভিন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো দুই-তিন ফোঁটা করে দিনে তিনবার নাকের ছিদ্রপথে ব্যবহার করবেন।
- তবে প্রতিদিনই এক সমস্যা হতে থাকলে সে ক্ষেত্রে রাতে ট্যাবলেট এভিল রিটার্ড একটি করে খেতে পারেন।
- সকালবেলা যারা জগিং করেন তারা অবশ্যই নিজের নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। এছাড়া প্রকৃতির এই শীতল পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি রাখতে হবে।
- সর্দির সময়ে হিস্টাসিন, হিস্টাল, এভিল , এক্সপিলিন ইত্যাদি অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যায়।
এগুলোতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলতে পারেন।
এলার্জি রোধে করণীয়,
১. ফুলের রেণু থেকে দূরে থাকতে হবে।
২.বাসা-বাড়ির কার্পেট, পুরাতন বই, কাপড় বা ফোমের সোফা সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩.তোশককে রেক্সিন বা ম্যাট্রেস দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে সবসময়।
৪.ধুলাবালি, ধোঁয়া, ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলতে হবে।
এলার্জি দূর করার ক্রিম
স্কিন সমস্যার জন্য অনেক ডাক্তার নানা ধরনের ক্রিম এর ব্যবহার করতে বলেন। সেই সকল ক্রিমের মধ্যে অন্যতম টারবিন। এছাড়াও ডাক্তাররা এন্টিহিস্টামিন স্টেরয়েড মলম ও ক্যালামিন লোশন জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করতে উপদেশ দিয়ে থাকেন। জানা যায়, ক্রিমগুলো নাকি স্কিন এলার্জির জন্য খুবই কার্যকরী।
মুখ/স্পর্শকাতর অঙ্গের এলার্জি দূর করার উপায়
মুখ বা স্পর্শকাতর অঙ্গে এলার্জি সর্বদাই যন্ত্রণাদায়ক, এ থেকে মুক্তি পেতে নিচের উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে ।
কোল্ড শাওয়ার: ঠাণ্ডা পানির গোসল ত্বকের জ্বালা এবং এলার্জি হ্রাস করতে সহায়তা করে। একটি শীতল ঝরনা আপনার রক্তনালীগুলি সঙ্কুচিত করে এবং হিস্টামিন বেরোতে দেয় না। এটি অ্যালার্জির তীব্রতা এবং ত্বকের জ্বালাও কমায়।
অ্যালোভেরা: প্রাকৃতিক ওষধি এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় অ্যালোভেরা জেল। এটি মুখের ত্বকের অ্যালার্জির অন্যতম সেরা প্রতিকার। অ্যালোভেরা পাতা থেকে বা কিনে নেওয়া অ্যালোভেরা পণ্য থেকে এক চা চামচ জেল বের করে আক্রান্ত স্থানে জেলটি সরাসরি লাগিয়ে দিন। প্রায় ৩০ মিনিট রেখে এটি ধুয়ে ফেলুন।
অলিভ অয়েল: জলপাই তেল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে উপকারি। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এ তেল চুলকানি হ্রাস করে,আরাম দেয়।
এছাড়াও দেহের অন্য অংশের এলার্জী দূর করবেন যেভাবে,
কর্পূর এবং নারকেল তেল - আপনার ত্বকে যদি এলার্জি থাকে এবং সেই জায়গায় যদি চুলকানি হয় তাহলে সেখানে কাপুর এবং নারকেল তেল ব্যাবহার করতে পারেন। কর্পূর এবং নারকেল তেলের সংমিশ্রণ এলার্জি আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে দিন, তাহলে আপনি দ্রুত এলার্জী থেকে আরোগ্য পাবেন আশা করি।
ফিটকিরির পানি দিয়ে এলার্জি হওয়া জায়গা ধুয়ে পরিষ্কার করুন। কর্পূর এবং সরিষা তেল সেই জায়গায় লাগাতে থাকুন।
আমলকীর বীজ পুড়িয়ে রাখুন এবং তাতে একটু কাপুর এবং নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে লাগান। এর ফলে আপনি অনেক আরাম পাবেন।
সবশেষে
এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে ক্রিম,ঔষধ ব্যবহার না করে ভেষজ খাবারে মনোযোগ দিলে দ্রুত আরোগ্য সম্ভব। আশা করি এলার্জী রোধে এই লেখনীতে আপনারা প্রাকৃতিক এবং এলোপ্যাথিক দু'রকমের ঔষধের ব্যবহারই জানতে পেরেছেন।
0 Comments