এলার্জির ঔষধ সম্পর্কে জানুন
এলার্জির ঔষধ গ্রহন করার একমাত্র কারণ হলো, চুলকানি দূর করে স্বস্তি লাভ করা। এলার্জি দূরে ঠেলে আরাম ভোগ করতেই ঔষধ গ্রহন করে সবাই। কেননা এলার্জির চুলকানি এমন একটা পরিচিত সমস্যা যা আমাদের সবসময় বিরক্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়। চুলকানি বিভিন্ন কারনেউ হয়ে থাকে।
এলার্জির ঔষধ; এলোপ্যাথিক ঔষধ ও মলমের নাম
১.এলাট্রল (Elatrol)
২.সেটিরিজিন (Cetirizine)
৩.পেভিসোন (Pevisone)
৪.ওরাডিন (Oradine)
৫. ইএল-সি (ELC-M)
এলার্জির ট্যাবলেট
- Claritin Reditabs
- Nasacort
- Deslor
- Allegra Allergy
- Leest Plus
- Telfast
- Moxilase - DX
- Fexo 120
চুলকানি কেনো হয়?
এলার্জি বা চুলকানির বিভিন্ন কারন রয়েছে। এগুলির মধ্যে সাধারণ কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
- কমন কোল্ড এলার্জি বা সাধারণ ঠান্ডা এলার্জি।
- মৌসুমি এলার্জি
- খাবারজনিত এলার্জি
- ওষুধে এলার্জি
- ফুসকুড়ি
- একজিমার দরুণ শুষ্ক ত্বক
- গর্ভাবস্থা
- বিভিন্ন পোকামাকড়ের কামড় বা স্টিং
- দেহে বিভিন্ন প্যারাসাইটি এর উপস্থিতি।
এলার্জির ঔষধ; প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি
এলোপ্যাথিক বা ডাক্তারের ঔষধ গ্রহণ ছাড়াও যেকেউ চাইলে প্রাকৃতিক ঔষধ গ্রহণ করে এলার্জি থেকে দূরে থাকতে পারে।
- অ্যালার্জির কারণে চুলকানি হলে সরিষার তেলে ৬-৭ কোয়া রসুন পিষে চুলায় ভাজুন। রসুনের রং বাদামী হয়ে গেলে তা নামিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন গরম থাকাকালীন অবস্থাতেই। আশা করি চুলকানি কমে যাবে। কিন্তু আরো ফলাফল পেতে আপনি এর সাথে এলার্জির ট্যাবলেটও খেতে পারেন।
- মনে রাখবেন শুষ্ক ত্বকে চুলকানি বেশি হয়, তাই সকলের সাবানের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
- ত্বকের শুষ্কতা কমাতে লোশন বা ময়েশ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
- আরামদায়ক হালকা ও সুতি কাপড় পরিধান করতে হবে। দামি দামি বিশেষ করে উলের বা পলিয়েস্টার কাপড় কিন্তু চুলকানি বাড়িয়ে দেয়। তাই এলার্জি সমস্যা থাকলে এসব কাপড় পরিহার করবেন।
- উচ্চ তাপমাত্রা বা গরমের কারনে চুলকানি বেড়ে যায়, তাই শীতল ও বাতাসযুক্ত স্থানে থাকুন।
- অ্যালোভেরা এলার্জির জীবাণু প্রতিরোধে সক্ষম যা কিনা প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। ইহা ত্বক জ্বালা কমানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। অ্যালোভেরা গাছের পাতাকে বেটে সেখান থেকেপিচ্ছিল রস বার করে নিন এবং সেই রস এলার্জি হওয়া জায়গায় ব্যবহার করুন।
- নিম হল বহু রোগের উপকারী বিশিষ্ট একটি ঔষধ। ইহা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট এলার্জি নিষ্কাশন করতে ব্যবহার করা হয়। নিমের কিছু পাতা রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরদিন সকালে সেগুলো বেটে পেস্ট তৈরি করে নিন। চুলকানি হওয়া জায়গায় পেস্ট ব্যবহার করুন।
- তাজা আদা, মৌরি এবং পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে তা পান করুন। এই পানি আপনি প্রতিদিন ২-৩ বার পান করতে পারেন। এটি ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- গরম পানিতে গোসল করলে ত্বক শুস্ক হয়ে যায় এবং শুষ্ক ত্বকে এলার্জি চুলকানি বেশি হয়। তাই সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল সারুন।
- যেসব খাবার গ্রহনে এলার্জি চুলকানি হয়, সেই খাবারগুলো বর্জন করতে হবে।
- একটি বিষয় হলো,এলার্জি চুলকানি হলে না চুলকিয়ে থাকা কষ্টের ব্যাপার। তবে স্ক্র্যাচিং বা চুলকানোর কারনে ত্বকে ইনফেকশান হয়ে যেতে পারে।
এলার্জির ঔষধের ব্যবহার
এলাট্রল মৌসুমী এবং বহুবর্ষজীবী অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সম্পর্কিত উপসর্গগুলো সাড়ানোর জন্য ডাক্তাররা পেসক্রাইভ করে থাকেন।
- এলার্জির ট্যাবলেট মানব দেহের দীর্ঘস্থায়ী ইডিওপ্যাথিক ছত্রাক দূর করে।
- দেহের অভ্যন্তরের অ্যালার্জেন-প্ররোচিত হাঁপানির জটিল ত্বকের প্রকাশের চিকিৎসাতে এলার্জির ঔষধ ব্যবহৃত হয়।
- সবরকমের এলার্জির চিকিতসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় উক্ত ঔষধ গুলো।
- সিটিরিজিন ঔষধের এলার্জি বিরোধী কার্যকারিতা ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায় এবং ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত স্খায়ী হয়। একারণে সিটিরিজিন দৈনিক একক মাত্রায় কার্যকর বা একবারের বেশী গ্রহন না করলেও চলে।
- এছাড়াও সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস, পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস এবং ক্রনিক ইডিওপ্যাথিক আর্টিকেরিয়ায় ডাক্তাররা এসব ঔষধ নির্দেশিত করে থাকেন।
- ওরাডিন নামক আরেকটি ট্যাবলেট আছে, যা দ্রুত চুলকানি কমাতে ভালো কাজ করে।এলাট্রল এর সাথে এর পার্থক্য হল ওরাডিন আপনাকে ঘুমাতে দেবে না। তবে আপনি ওরাডিন বা এলাট্রল যাই গ্রহণ করুন না কেন, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে একটির বেশি কখনোই গ্রহণ করবেন না। কেননা পাওয়ারফুল এই ট্যাবলেটগুলো চুলকানির সময় একবার খেলে ১/২ ঘণ্টার মধ্যে চুলকানি কমানোর ক্ষমতা রাখে।
- এলার্জির ট্যাবলেট এ্যালার্জেন-এর ফলে সৃষ্ট এ্যাজমাকে ভালো ভাবে দূর করে। এটি মূলত সিজনাল এবং পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস জনিত লক্ষণগুলোর নিরাময়ে নির্দেশিত।
- কিছু ক্ষেত্রে এলার্জির ঔষধ ক্রণিক ইউডিয়প্যাথিক অ্যার্টিক্যারিয়ার ত্বকীয় অজটিল লক্ষণগুলোর নিরাময়ে চুলকানি জনিত এ্যাজমা-এর চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- চুলকানি থেকে দ্রুত উপশমের জন্য চুলকানির জায়গায় পেভিসোন মলম লাগিয়ে দেখতে পারেন। আশা করা যায়, ৫ মিনিটের মধ্যে আপনার চুলকানি কমে যাবে।
- এছাড়াও পেভিসোন মলম ব্যবহারের সাথে এলাট্রল ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারেন। এর ফলে সামান্য ঝিমুনি বা তন্দ্রা হতে পারে।
এলার্জীর ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতা
এলার্জির সবরকম ঔষধে কম-বেশী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তাই এসব ঔষধের ব্যবহারে সতর্কতা গুলো হলো।
- এলার্জির ঔষধ গ্রহণের পর গাড়ী ও ভারী মেশিন চালানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কেননা এ ঔ সেবনে ঘুম বা ঝিমানো ভাব থেকে এর ফলে ঘটতে পারে বড় কোনো দূর্গটনা।
- এলার্জিক সমস্যার সমাধানে সেটিরিজিন গ্রহন এর পর অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা অন্যান্য সিএনএস ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ গ্রহন থেকে বিরত থাকা উচিত।
- গর্ভাবস্থাকালীন ব্যবহারের ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অতীব প্রয়ােজনীয়তা না থাকলে সেটিরিজিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। সেটিরিজিন মায়ের দুধের সাথে নিঃসৃত হয়ে থাকে তাই স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ইহা নির্দেশিত নয়।
- বাজারের কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলোর কারণে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই কোন ওষুধের প্রতি এলার্জিক প্রতিক্রিয়া থাকলে তা ডাক্তারকে জানাতে হবে।
শেষকথা
এলার্জির ঔষধ গ্রহনের পর যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় অথবা মুখ বা জিহ্বায় ফোলাভাব বা বমি বমি বমি ভাব অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এগুলি কিন্তু অ্যানাফিল্যাক্সিসের লক্ষণ, যা একটি জীবন- এলার্জি প্রতিক্রিয়া দিয়ে নষ্ট করে দিতে পারে।
0 Comments