টিনিটাস: কানের মধ্য শোঁ শোঁ আওয়াজ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। এই সমস্যায় রোগী তার কানে অস্বাভাবিক কিছু আওয়াজ পায়। এটি ঘটে একটানা বা সাময়িক বিরতি নিয়ে। এটিকে টিনিটাস বলা হয়।
কানের শোঁ শোঁ আওয়াজ বা টিনিটাস এ করণীয়
|
টিনিটাস কী ?
টিনিটাস কোন রোগ নয়। এটি একটি উপসর্গ। কান বা শরীরের কোন রোগের উপসর্গ যা রোগী তার কানে অনুভব করে।
বাইরের কোন আওয়াজ ছাড়াই যখন নিজের কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনে, তাকে টিনিটাস বলে।
এই শব্দ বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। একেকজন একেকরকম আওয়াজ শুনতে পায়। যেমন- বাঁশির শব্দ, বাতাসের শব্দ, ঘন্টার শব্দ ইত্যাদি।
রোগী এই সমস্যাটি অনুভব করে যখন রুমে একা থাকে অথবা চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে যায় তখন শব্দটি বেড়ে যায়। অনেকেই এ সমস্যায় ভোগেন এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
রোগটি বেশিমাত্রায় হতে থাকলে বলা যায় এটি ভয়াবহ একটি সমস্যা। এ কারণে ভুক্তভোগীদের মধ্য আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়। সমস্যার শুরুতেই এর ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
যেকোনো বয়সে এ সমস্যা হতে পারে। কখোনো স্থায়ী বা কখোনো সাময়িক দেখা দেয়। টিনিটাস এক কান অথবা উভয় কানেই হয়ে থাকে। ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা
টিনিটাস কত প্রকার ?
টিনিটাস সাধারণত তিন ধরণের-
- সাবজেক্টিভ
- অবজেক্টিভ
- অডিটরি হ্যালুসিনেশন
১. সাবজেক্টিভ
বাইরের কোনো শব্দ ছাড়া রোগী যখন তার কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনে। রোগী কখনো সাময়িক বিরতি দিয়ে কখনো বা একটানা শব্দ শোনে। এর ফলে কোনো কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারেন না।
২. অবজেক্টিভ
এ ধরনের শব্দ রোগীর শরীর থেকে উৎপত্তি হয় বলে মনে করা হয়, যা স্টেথোস্কোপের সাহায্যেও শোনা যায়।৩. অডিটরি হ্যালুসিনেশন
বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই, এমন শব্দ শুনতে পায়। এটি সাধারণত মানসিক রোগে অথবা কানের কিছু কিছু অপারেশনের ক্ষেত্রে হতে পারে। কখনো কখনো কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও হতে পারে।
টিনিটাসের কারণ
বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা বা বার্ধক্যজনিত কারণে এই সমস্যা হতে পারে। শব্দদূষণ টিনিটাসের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া
- বহিঃকর্ণে ময়লা জমলে,
- কোনো বস্তু কানের ভেতর আটকে গেলে,
- কানে প্রদাহ হলে,
- কানের পর্দা ফেটে গেলে,
- মধ্যকর্ণে পানি জমলে,
- মধ্যকর্ণের অস্থি নাড়াচাড়া না করলে অন্তঃকর্ণের চাপ বৃদ্ধি পেলে,
- শ্রবণসংক্রান্ত স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে,
- কানের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ যেমন- অ্যাসপিরিন অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘ দিন সেবন করলে,
- রক্তশূন্যতা দেখা দিলে,
- দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ থাকলে,
- ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় বেশি পান করলে,
- কানে আঘাত পেলে,
- দাঁত ও চোয়ালের সমস্যায়,
- ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি প্রয়োগে
এ উপসর্গের চিকিৎসায় কারণ নির্ণয়ে কিছু পরীক্ষা করা যায়। যেমন-
- টিউনিং ফর্ক টেস্ট,
- পিউর টোন অভিওমেটি টিমপ্যানোমেটি,
- এসআরটি,
- সিটিস্ক্যান,
- এমআরআই,
- রুটিন রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি।
কানের শোঁ শোঁ আওয়াজ বা টিনিটাস এর চিকিৎসা :
এটি কোন রোগ নয় যেহেতু সেহেতু ঔষুধের চেয়ে রোগীর চেষ্টা থাকলেই রিকোভার করা যায়। এতে রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে পাশাপাশি স্বাস্থের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং আশ্বস্ত থাকতে হবে।
- রোগীকে প্রথমে আশ্বস্ত থাকতে হবে কেননা এটি জীবনসংকট করে এমন রোগ নয়
- রোগ সম্পর্কে রোগীকে বিস্তারিত জেনে রাখতে হবে।
- শোঁ শোঁ শব্দের কারণ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিতে হবে।
- আ্যসপিরিন, ব্যাথানাশক ঔষুধ এবং অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় আ্যন্টিবায়োটিক সেবন কমাতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- উচ্চশব্দ এড়িয়ে চলতে হবে।
- ক্যানে হেডফোন ব্যবহার হতে বিরত থাকতে হবে।
- মোবাইল ফোন যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে।
- কটনবাড অথবা এধরণের কিছু দিয়ে কান পরিষ্কার করা বা খোঁচানো যাবেনা।
- কানে যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:হিয়ারিং এইড, টিনিটাস মস্কার।
- মাথার পাশে এর্লাম ঘড়ি, এসির পরিবর্তে এসির পরিবর্তে সিলিং ফ্যান বেশি গ্রহণ যোগ্য।
Conclusion
- https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/tinnitus/symptoms-causes/syc-20350156#:~:text=Tinnitus%20is%20when%20you%20experience,especially%20common%20in%20older%20adults.
- https://www.health.harvard.edu/diseases-and-conditions/tinnitus-ringing-in-the-ears-and-what-to-do-about-it
- https://www.nidcd.nih.gov/health/tinnitus
0 Comments