বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন মহানবী সাঃ

বিশ্বস্রষ্টা, বিশ্বপ্রভু মহান আল্লাহ তাআলা বিশ্বশান্তির জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে দুনিয়ায় পাঠালেন। বিশ্বজাহান আনন্দে গেয়ে উঠল, 'বালাগাল উলা বি কামা লিহি, কাশাফাদ দুজা বি জামা-লি হি: হাছুনাত জামিউ খিছ-লি হি, ছল্লু আলাইহি ওয়া আ-লি হি' (সবার ওপরে আসন যাঁর; তাঁর রূপের ঝলকে কেটেছে আঁধার, সকল কিছুই সুন্দর তাঁর; দরুদ তাঁকে ও তাঁর পরিবার)।

বিশ্ব শান্তির দূত মহানবী সাঃ

বিশ্ব শান্তির দূত মহানবী সাঃ
বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন মহানবী সাঃ

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ধরাধামে আগমন করলেন পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে। রবি মানে বসন্তকাল। আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের তৃতীয় মাস হলো ‘রবিউল আউয়াল'। 

আরবি বসন্তের মাস দুটি হলো ‘আর রবিউল আউয়াল' অর্থ প্রথম বসন্ত ও ‘আর রবিউস সানি’ বা ‘আল রবিউল আখার' (আর রবিউল আখির) অর্থ দ্বিতীয় বসন্ত বা শেষ বসন্ত। 

রবি শব্দের মূল অর্থ চতুষ্কোণ। এ ছাড়া রবি শব্দটি শক্তি, শৌর্যবীর্য, উচ্চতা, উন্নতি, স্থিত হওয়া, উপনীত হওয়া, আবাস, নিবাস অর্থে ব্যবহৃত হয়। (লিসানুল আরব, পৃষ্ঠা: ১১৩-১২৩)। লিসানুল আরব সংগ্রহ করতে চাইলে অ্যামাজন থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। 

আল্লাহ তাআলা ভালোবেসে সৃষ্টি করলেন বিশ্বনিখিল। তিনি তাঁর সৃষ্টিতে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখতে চান। তাই স্বীয় ভালোবাসার প্রতিবিম্বরূপে প্রেরণ করলেন প্রিয় হাবিব (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ আখেরি নবী ও সর্বশেষ রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। 

তিনি ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব। মানবীয় অবয়বে আল্লাহর গুণাবলির সর্বোচ্চ সমাহার ঘটেছিল মহানবী (সা.)-এর মধ্যে। তাঁর জীবন ছিল জীবন্ত কোরআন। তাঁর শুভাগমনে ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘটেছে। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, 'আল্লাহর রং! আর আল্লাহর রং অপেক্ষা অধিকতর সুন্দর রং কী হতে পারে? আমরা তাঁরই ইবাদতকারী অনুগত বান্দা।' (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৩৮)।

প্রকৃতির ধর্ম, মানবধর্ম, ভালোবাসা ও প্রেমের ধর্ম, মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের পূর্ণতাদানের জন্যই মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব। 

কোরআনের ভাষায়, ‘তিনি তাঁহার রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন অপর সকল ধর্মের ওপর উহাকে জয়যুক্ত করার জন্য। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।' (সুরা-৪৮ ফাতহ, আয়াত: ২৮)।


মহানবীর সুমহান আদর্শ ও চরিত্র বলেই ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে। ‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত।' (সুরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪)। ‘অবশ্য তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন, তোমাদিগকে যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী। 

তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য তথা ইবাদতের উপযুক্ত মাবুদ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত : ১২৮-১২৯)।'

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা মুমিনের ইমান, সুন্নাতের অনুসরণই ভালোবাসার প্রমাণ। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, '(হে রাসুল!) আপনি বলুন, “যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো; ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)।”

ইসলামের শিক্ষা, ‘প্রতিবাদের শ্রেষ্ঠ পন্থা উত্তম আচরণ'। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'মন্দের প্রতিবাদ করো উত্তম দ্বারা, তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত : ৯৬)।’ 
ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা, ফলে তোমার সহিত যার শত্রুতা রয়েছে, সে-ও তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে (সুরা-৪১ ফুচ্ছিলাত, আয়াত : ৩৪)।'

হিংসা-বিদ্বেষ ও কলুষমুক্ত অন্তর নবীজি (সা.)-এর মহান সুন্নাত সর্বোত্তম আদর্শ। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে (আদর করে) বলেছেন, “হে আমার প্রিয় সন্তান! যদি তুমি পারো তবে সকাল-সন্ধ্যা রাত-দিন এভাবে অতিবাহিত করো যেন তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো (গিশ) হিংসা বিদ্বেষ না থাকে, তবে তা-ই করো।” 

তিনি আরও বলেন, “এটা আমার অন্যতম সুন্নাত আদর্শ। আর যারা আমার সুন্নাত আদর্শকে (আমলের মাধ্যমে) ভালোবাসবে, তারা প্রকৃত আমাকেই ভালোবাসে; আর যারা আমাকে ভালোবাসে তারা আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিজি : ২৭২৬)।'

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী 
যুগ্ম মহাসচিব, 
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; 
সহকারী অধ্যাপক, 
আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম 

বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন মহানবী সাঃ

Post a Comment

0 Comments