উইলিয়াম হার্ভে (William Harvey) একজন ইংরেজ চিকিৎসাবিজ্ঞানী। চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে, মানুষের দেহ আর রোগ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদেরই বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানী উইলিয়াম যে আবিষ্কারের জন্যে স্মরণীয় হয়ে আছেন তার মূল্য মোটেই কম নয়।
উইলিয়াম হার্ভে (William Harvey)
উইলিয়াম হার্ভে |
বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্ভের পরিচয়
জন্ম | 1 এপ্রিল 1578 ফোকস্টোন, কেন্ট, ইংল্যান্ড | ||
---|---|---|---|
মৃত্যু | 3 জুন 1657 (বয়স 79) রোহ্যাম্পটন, লন্ডন, ইংল্যান্ড | ||
জাতীয়তা | English | ||
শিক্ষা | গনভিল এবং কেয়াস কলেজ, কেমব্রিজ পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় | ||
পরিচিতির কারণ | De Motu Cordis, 1628 হৃতপিন্ড এবং রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতির আবিষ্কার এবং নানাবিধ বৈজ্ঞানিক গবেষণা | ||
ক্ষেত্র | ঔষধ অ্যানাটমি | ||
Signature | |||
![]() |
আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে মানুষের দেহের ভিতরে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া বা নিয়মটা তিনিই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন।
তখন মানুষের দেহের ভিতরটা দেখা সহজ ছিল না, অণুবীক্ষণ যন্ত্রও তৈরি হয়নি। তাই একে একটা বড় আবিষ্কারই বলতে হবে।
১৫৭৮ সালে ইংল্যান্ডের কেন্ট প্রদেশের ফোকটোন নামে একটা ছোট শহরে হার্ভের জন্য হয়। তাঁর বাবা টমাস হার্ভে ছিলেন ওই শহরেরই মেয়র।উইলিয়াম প্রথমে ক্যান্টারবেরিতে লেখাপড়া করেন। তারপর পনেরো বছর বয়সে তিনি পড়তে যান কেমব্রিজে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। এই সময় থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্র সম্বন্ধে তাঁর মনে গভীর আগ্রহ জন্মে।
১৬০২ সালে হার্ভে পাদুয়া থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৬০২ সালে হার্ভে পাদুয়া থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফেরার আগেই কী করবেন তা ঠিক করে ফেলেছেন। তাঁর ইচ্ছে ডাক্তারি করবেন, গবেষণা করবেন আর অধ্যাপনাও করবেন। এর প্রত্যেকটাই তিনি করেছিলেন আর পুরোপুরি সফলও হয়েছিলেন।
১৬০৭ সালে কেমব্রিজের চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে চাকরি শুরু হয় হার্ভের। শুধু কি তাই? তখনকার দিনে দেশের রাজার স্বাস্থ্য দেখাশুনা করার জন্যে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকদের নিয়ে একটা দল গঠন করা হতো। হার্ভে হয়ে গেলেন সেই দলেরই একজন। এও বড় কম সম্মানের কথা নয়।
এরপর বার্থোলোমিউ হাসপাতালের চিকিৎসক হন তিনি। এসময় তিনি মানুষের শরীরের একটা বিশেষ অঙ্গ ও তার ক্রিয়া নিয়ে খুব ভাবনাচিন্তা করছিলেন। সেটি হল হৃৎপিণ্ড।
আর হৃৎপিণ্ডকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রক্ত চলাচলের ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে শুরু করলেন। এর আগে রক্ত চলাচল ঠিক কীভাবে হয় সে সম্পর্কে কারও সঠিক ধারণা ছিল না।
এবার হার্ভির কাজ হল রক্ত চলাচল সম্পর্কে গবেষণা করা। মনে রেখো কাজটা তখন খুবই কঠিন। কারণ এক্স-রে বা অনুবীক্ষণ যন্ত্র তখনও চালু হয়নি।
তবে ভরসা এই যে, ততদিনে মানুষের মৃতদেহ কেটে তার ভিতরের ব্যাপারগুলো পরীক্ষা করার কাজটা একটু একটু করে চালু হয়ে গেছে।
প্রাচীনকাল থেকেই সে কাজটা শুরু হলেও বহুকাল পর্যন্ত মানুষের নানা কুসংস্কারের জন্যে শবব্যবচ্ছেদে বাধা পড়ত প্রায়ই।
যাই হোক, হার্ভে কিছুটা শবব্যবচ্ছেদের উপর আর কিছুটা নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে রাত-দিন গবেষণা করতে লাগলেন।
১৬১৬ সালেই তিনি মানবদেহে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া সম্বন্ধে লিখতে শুরু করেছিলেন। তবে তাঁর আবিষ্কারের কথা ১৬২৮ সালে লেখা একটা বইয়েই সবচাইতে ভালো করে পাওয়া গেল।
যাই হোক, হার্ভে কিছুটা শবব্যবচ্ছেদের উপর আর কিছুটা নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে রাত-দিন গবেষণা করতে লাগলেন।
১৬১৬ সালেই তিনি মানবদেহে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া সম্বন্ধে লিখতে শুরু করেছিলেন। তবে তাঁর আবিষ্কারের কথা ১৬২৮ সালে লেখা একটা বইয়েই সবচাইতে ভালো করে পাওয়া গেল।
এ কথা সবাই মোটামুটি জানত যে মানুষের হৃৎপিণ্ডে চারটি কুঠুরি আছে, রক্ত চলাচলের জন্যে ধমনি আর শিরা নামে দুই রকমের নালিও আছে।
আরও পড়ুন...
কিন্তু ঠিক কীভাবে এসব নালি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় আর হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কই বা কী, সেটা জানা ছিল না।
হার্ভে আবিষ্কার করলেন যে, শিরা দিয়ে রক্ত এসে হৃৎপিণ্ডে ঢোকে। হৃৎপিণ্ডের কাজ হল রক্তকে মানুষের সারা দেহে পাঠিয়ে দেয়া। হৃৎপিণ্ড পাম্প করে প্রায় ঠেলা মেরে রক্তকে বার করে দেয়।
হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত যায় ফুসফুসে। ফুসফুসের কাজ হল রক্তকে বিশুদ্ধ করে আবার তা হৃৎপিণ্ডে পাঠানো।
কিন্তু রক্ত যে পথে হৃৎপিণ্ডে এসে ঢুকেছিল সে পথে বেরোতে পারে না। বাঁদিকের কুঠুরি থেকে বেরিয়ে রক্ত ডানদিকের কুঠুরিতে এসে পৌঁছয়।
এভাবে ধমনি আর শিরা-উপশিরার মধ্যে দিয়ে সারা দেহে রক্ত-চলাচল হয়। এই হল হার্ভের আবিষ্কার।
দেহের মধ্যে রক্তের পরিমাণটাই যে নির্দিষ্ট তাও তিনিই প্রথম বলেছেন। তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন যে ধমনি আর শিরার কাজ আলাদা।
দেহের মধ্যে রক্তের পরিমাণটাই যে নির্দিষ্ট তাও তিনিই প্রথম বলেছেন। তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন যে ধমনি আর শিরার কাজ আলাদা।
শিরার ভিতর দিয়ে রক্ত হৃৎপিণ্ডে যায়। আর ধর্মনির মধ্যে দিয়ে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের সব জায়গায় পৌঁছায়। তিনি এ কথাও প্রমাণ করে দিলেন যে, রক্ত চলাচল সর্বক্ষণ চলে।
ঘুমোলেও এর বিরাম নেই। একমাত্র প্রাণী মরে গেলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবার ধমনি কেটে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে থাকলেও প্রাণীর মৃত্যু হবে।
১৬৫৭ সালে প্রায় আশি বছর বয়েসে হার্ভের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাশাস্ত্র এবং শারীরবিদ্যা চিরদিন তাঁর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে।
১৬৫৭ সালে প্রায় আশি বছর বয়েসে হার্ভের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাশাস্ত্র এবং শারীরবিদ্যা চিরদিন তাঁর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে।
Source
- https://www.britannica.com/biography/William-Harvey
- https://www.ahajournals.org/doi/full/10.1161/CIRCRESAHA.119.314977
- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2776239/
- https://www.famousscientists.org/william-harvey/
- https://www.nationalgeographic.com/history/history-magazine/article/history-william-harvey-medicine-heart
- https://embryo.asu.edu/pages/william-harvey-1578-1657
- https://journals.physiology.org/doi/full/10.1152/nips.01391.2002
উইলিয়াম হার্ভে (William Harvey)
0 Comments