মদের ব্যবসায়ীরা গিয়ে ধরে পড়লেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে, তাঁর নাম লুই পাস্তুর (Louis Pasteur)।
পাস্তুর রসায়ন বা কেমিস্ট্রির অধ্যাপক, আর নানারকম জীবাণু নিয়ে গবেষণা করে তখন খুবই বিখ্যাত।
প্রায় দু'বছর ধরে গবেষণা করে পাস্তুর মদ ভালো রাখার উপায় বার করে ফেললেন। ফ্রান্সের মদ পৃথিবীবিখ্যাত। পাস্তুরের জন্যেই বেঁচে রইল ফরাসি মদ।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) এর জন্ম হয়েছিল ১৮২২ সালে ছোট্ট শহর দোলে। তাঁর বাবা ছিলেন চর্মব্যবসায়ী। ছেলের লেখাপড়ার দিকে তাঁর খুবই মনোযোগ ছিল।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পাস্তুরের শিক্ষা শুরু হয়। পরে তিনি পড়াশুনো করেন আর্জোয়ায় আর সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাঁর প্রথম চাকরি অঙ্কে শিক্ষকতা। কিন্তু ওখানেই লেখাপড়া শেষ করতে চাননি তিনি। তাই তাঁর প্রিয় বিষয় রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার চর্চা চালিয়ে যেতে লাগলেন।
রাসয়নে তাঁর কৃতিত্বের জন্য পাস্তুরকে স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপক করা হয়।
রসায়ন আর জীবাণু নিয়ে গবেষণা করে তখন তিনি এতই সুনাম করেছিলেন যে, নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক আসতে লাগল।
বিশেষ করে টারটারিক অ্যাসিড নামে একরকম অ্যাসিড বা অম্ল নিয়ে তাঁর গবেষণার কথা তখন লোকের মুখে মুখে ঘুরছে।
১৮৫৪ সালে তিনি লিল বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপক হন। এখানেই তিনি মদ সংরক্ষণের উপায় আবিষ্কার করেন।
আর শুধু কি তাই? যে কোনো জিনিসকে পচন থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, তারও উপায় ও কৌশল তিনি আবিষ্কার করেছিলেন।
তাঁর আবিষ্কৃত কৌশলের নাম পাস্তুরীকরণ। এই পদ্ধতিতে সমস্ত রকমের খাদ্যকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে আজও।
দুধ ও অন্যান্য তরল খাদ্যকে পাস্তুরীকরণের কৌশলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায় ।
তোমরা সবাই জানো যে, গুটিপোকার রস থেকে রেশম বা সিল্ক পাওয়া যায়।
অথচ সেই গুটিপোকার একরকম রোগ তখন ফ্রান্সে রেশম শিল্পের খুবই ক্ষতি করছিল।
১৮৬৫ সালে পাস্তুর এই রোগের হাত থেকে কীভাবে গুটিপোকাকে বাঁচানো যায় তা আবিষ্কার করেন।
এসময় কলেরা রোগ নিয়েও পাস্তুর গবেষণা করেছিলেন। তবে পাত্তুরের জীবনের শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব র্যাবিজ বা জলাতঙ্ক রোগের টিকা আবিষ্কার।
এই আবিষ্কারের জন্যে তিনি যেমন অমর হয়ে আছেন, তেমনি পৃথিবীর মানুষও এর জন্যে তাঁর কাছে চিরঋণী হয়ে রয়েছে।
সবাই জানত যে, পাগলা কুকুরের কামড় থেকে একরকম মারাত্মক রোগ হয়। তখনকার দিনে সেই রোগ একবার হলে মানুষ বাঁচত না।
পাস্তুর ১৮৮০ সালে জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে তাঁর গবেষণা শুরু করেন। অনেকগুলো পাগলা কুকুরকে আটকে রেখে তিনি নানাভাবে তাদের উপর নজর রাখতে লাগলেন।
অনেক কষ্টে পাগলা কুকুরের লালাও তিনি সংগ্রহ করলেন। পরীক্ষা করে তিনি জানতে পারলেন যে, একরকম জীবাণু কুকুরের শরীরে ঢুকে তাকে অসুস্থ করে তোলে। এই জীবাণুর নাম র্যাবিজ।
এই রোগ হলে কুকুর খেপে যায়। তার জিভ দিয়ে লাল ঝরতে থাকে। আর সে তখন যাকে সামনে পায় তাকে কামড়াতে চায়।
আর কামড়ালেই ওই রোগের জীবাণু ঢুকে যায় যাকে কামড়াল তার শরীরে। এবারে সেই মানুষটি ওই রোগে পড়ল। বড় ভয়ানক এই রোগ।
অসহ্য মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পায়, পানি খেতে পারে না, অথচ পিপাসায় জিভ শুকিয়ে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে মানুষ ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।
পাস্তুরের গবেষণা শেষ পর্যন্ত সফল হল। ১৮৮৫ সালে তিনি আবিষ্কার করেন এই রোগের টিকা। জোসেফ নামে একটি ছেলের শরীরে টিকা দিয়ে তিনি তাকে ওই ভয়ানক রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলেন।
ঘটনাটি জানাজানি হতে দেরি হল না। সারা জগতে ছড়িয়ে পড়ল এই খবর। এর পরে প্যারিসে পাস্তুরের নামে একটি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হল।
তার সামনে পাস্তুর জোসেফকে টিকা দিচ্ছেন এরকম একটা মূর্তি বসানো হল। আমাদের দেশেও আছে পাত্তুরের নামে গবেষণাগার ও চিকিৎসার কেন্দ্র।
অনেক গবেষণা করে আর অনেক বই লিখে অমর হয়েছেন পাস্তুর। তিয়াত্তর বছর বয়সে ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
একনজরে...
জন্ম |
জন্ম ২৭ ডিসেম্বর
১৮২২ দোলে, জুরা, ফ্রান্স |
মৃত্যু |
২৮সেপ্টেম্বর
১৮৯৫ (বয়স ৭২) মারনেস-লা-কোকুয়েট,
ফ্রান্স |
বিখ্যাত হওয়ার কারণ |
জলাতঙ্ক রোগের জন্য
প্রথম টিকা তৈরি করেছেন কলেরার টিকা অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন পাস্তুরাইজেশন |
স্বাক্ষর |
|
Source
- https://www.britannica.com/biography/Louis-Pasteur
- https://en.wikipedia.org/wiki/Rabies_virus
- https://www.sciencehistory.org/historical-profile/louis-pasteur
- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3342039/
- https://lemelson.mit.edu/resources/louis-pasteur
- https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/rabies
লুই পাস্তুর (Louis Pasteur)
0 Comments