গুলিয়েলমো মার্কনিঃ আজ থেকে দেড়শো বছর আগে যখন টেলিগ্রাফ আবিষ্কৃত হল তখন মানুষের বিস্ময়ের সীমা ছিল না। কীভাবে তারের ভিতর দিয়ে খবর দূরে চলে যায়, সে এক ভারি আশ্চর্যের ব্যাপার।
কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি আশ্চর্যের ব্যাপার বিনা তারে খবর বহুদূরে পাঠানো। একেই বলে বেতার।
এই বেতারের আবিষ্কারক গুলিয়েলমো মার্কনি নামে এক ইতালীয় বিজ্ঞানী। তাঁর ওই বিরাট আবিষ্কারের কথাই এখন বলব।
গুলিয়েলমো মার্কনি
গুলিয়েলমো মার্কনির সংক্ষিপ্ত পরিচয়
Born |
Guglielmo
Giovanni Maria Marconi Bologna, Kingdom
of Italy |
Died |
20 July
1937 (aged 63) Rome, Kingdom
of Italy |
Nationality |
Italian |
Alma mater |
University of
Bologna |
Known for |
Radio |
Awards |
Matteucci
Medal (1901) Nobel Prize for Physics (1909) Albert Medal (1914) Franklin
Medal (1918) IEEE Medal of Honor (1920) John Fritz
Medal (1923) Scientific
career |
১৮৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল ইতালির বলোনিয়া শহরে জন্ম হয়েছিল মার্কনির। ইতালির লেগৃহর্ন অঞ্চলের এক পলিটেকনিক বিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনো করেন তিনি।
তারপর নিজের শহর বলোনিয়ায় ফিরে এসে গবেষণা করতে শুরু করেন। তখন তাঁর বয়স কুড়িও হয়নি।
বাবা মোটেই খুশি হতে পারেননি ছেলের এই অদ্ভুত খেয়াল দেখে। তবুও মার্কনি মনপ্রাণ দিয়ে গবেষণা করে যেতে লাগলেন।
যখন তিনি স্কুলের ছাত্র, তখন জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী হাইনরিখ হার্টস বিদ্যুৎ-চৌম্বক শক্তি নিয়ে গবেষণা করে বিখ্যাত হয়েছিলেন।
হার্টস পরীক্ষা করে জানতে পেরেছিলেন যে, মহাকাশে ক্রমাগত বিদ্যুৎ-তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে, আর সেই তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে সারা পৃথিবীতে। হার্টসের গবেষণা সম্পূর্ণ হতে পারেনি। কারণ মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এবার মার্কনি হার্টসের ওই তথ্য নিয়ে নতুন করে গবেষণায় মেতে উঠলেন। বিদ্যুৎ-তরঙ্গকে ব্যবহার করে দূরে খবর কীভাবে পাঠানো যায়—এটাই এখন তাঁর গবেষণার বিষয়।
রেডিও আবিষ্কারের ইতিহাস
১৮৯৪ সালে তাঁর যখন মাত্র কুড়ি বছর বয়স তখন একদিন একটা ঘটনা ঘটল।
মার্কনি লক্ষ্য করলেন যে, তাঁর গবেষণাগারে একটি টেলিগ্রাফের চাবিতে চাপ দেবার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় বারো ফুট দূরে একটা ঘণ্টা বেজে উঠছে।
মার্কনি বুঝতে পারলেন যে, এই ঘণ্টা বাজছে বেতার তরঙ্গের সাহায্যে। টেলিগ্রাফের চাবি আর ঘণ্টা এই দুটো মোটেই কোনো তার দিয়ে জোড়া ছিল না।
এই ঘটনাটা দেখি মার্কনি এতই উত্তেজিত হয়ে উঠলেন যে, তাঁর মাকে ডেকে এনে দেখালেন। ছেলের এই সাফল্য দেখে মাও খুব উৎসাহিত হলেন।
তিনি মার্কর্নিকে ইংল্যান্ডে গিয়ে আরও গবেষণা করতে বললেন। তাঁর মনে হয়েছিল যে, ইংল্যান্ডে গেলে মার্কনির গবেষণায় আরও উন্নতি হবে।
আরও পড়ুন,,,
এর কিছুদিন পরে মার্কনি আর তাঁর ভাই আর একটা পরীক্ষা করলেন। তাঁর বাড়ির পাশে একটা ছোট পাহাড়ের নিচ থেকে মার্কনি বেতার সংকেত পাঠালেন, আর তাঁর ভাই পাহাড় থেকে সেই সংকেত ধরামাত্র হাত নেড়ে সেকথা মার্কনিকে জানালেন। এর ফলে মার্কনি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
এরপর মার্কনি তাঁর গবেষণার সুবিধে হবে ভেবে ইংল্যান্ডে গেলেন। ১৮৯৭ সালে প্রায় বারো মাইল দূরের একটা জায়গায় বিনা তারে বেতার সংকেত পাঠিয়ে সবাইকে অবাক করে দিলেন।
১৮৯৯ সালে তিনি চাইলেন ইংলিশ চ্যানেলের ওপারে খবর পাঠাতে। কিন্তু যেদিন সবার সামনে এটা করে দেখানোর কথা তার আগের দিন প্রচণ্ড ঝড়ে তাঁর সব আয়োজন নষ্ট হয়ে গেল।
মার্কনি দমলেন না। প্রচুর পরিশ্রম করে আবার সব ঠিকঠাক করলেন। এবার তিনি ইংলিশ চ্যানেলের এক পার থেকে অন্য পারে সংকেত পাঠালেন। বহু লোক এই ঘটনার দিন হাজির ছিল।
মার্কনির এই সাফল্য দেখে সবাই সেদিন আনন্দে অধীর। ১৯০১ সালে মার্কনি আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পারে বেতারে খবর পাঠিয়ে সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেন।
এভাবেই তৈরি হল রেডিও বা বেতারযন্ত্র। মহাকাশে সব সময় যে বেতার তরঙ্গ তৈরি হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে সেই অদৃশ্য তরঙ্গের মাধ্যমে খবর বা সংকেত দূরে বহুদূরে পাঠানোর কৌশল আবিষ্কারই মার্কনির আসল কৃতিত্ব।
পরে এই আবিষ্কারকে আরও নানা কাজে লাগানো হয়েছে। ১৯০৯ সালে মার্কনির এই মস্তবড় কৃতিত্বকে স্বীকৃতি জানানো হল তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ দিয়ে। তখন তার বয়স মাত্র ৩৩ বছর।
এখানে একটা কথা অবশ্য বলতেই হবে। আমাদের বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুও প্রায় একই সময় বেতার সংকেত পাঠাবার ব্যাপারটা আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন।
কিন্তু পৃথিবীর বিজ্ঞানী মহল সেটা জানতে পারে আরও পরে। তার আগেই মার্কনির আবিষ্কার স্বীকৃতি পেয়ে যায়।
গুলিয়েলমো মার্কনির মৃত্যু
১৯৩০ সালে মার্কনি ইতালির রয়াল অ্যাকাডেমির সভাপতি হন। তবে মাত্র ৬৩ বছর বয়সে ১৯৩৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
Source:
- https://history.aip.org/phn/11806006.html
- https://www.nobelprize.org/prizes/physics/1909/marconi/facts/
- https://daily.jstor.org/the-birth-of-radio/
- https://physicstoday.scitation.org/do/10.1063/pt.5.031451/full
- https://www.indiatoday.in/education-today/gk-current-affairs/story/jagadish-chandra-bose-839079-2016-11-30
গুলিয়েলমো মার্কনি
0 Comments