আর্কিমিডিস | ইউরেকা ! ইউরেকা

গ্রিস দেশের সিরাকিউস অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব ২৮৭ অব্দে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস। বুদ্ধি আর জ্ঞানে তিনি ছিলেন সেকালের সেরা পণ্ডিতদের একজন। 

আর্কিমিডিস (Archimedes)

আর্কিমিডিস (Archimedes)

আলেকজান্দ্রিয়া মিউজিয়াম নামে তখনকার এক বড় বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া শিখেছিলেন। আর্কিমিডিস সম্বন্ধে একটা মজার গল্প শোনা যায়। 

তিনি নাকি একদিন ‘ইউরেকা, ইউরেকা' বলে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ভিজে কাপড়েই রাজপথে ছুটোছুটি করেছিলেন। গ্রিক ভাষায় 'ইউরেকা' শব্দের মানে আমি পেয়ে গেছি। তা আর্কিমিডিস কী পেয়েছিলেন, এবারে সেই কথাই বলব।

সিরাকিউসের রাজা একবার এক স্বর্ণকারের কাছ থেকে অনেক দাম দিয়ে একটা সোনার মুকুট কেনেন। কিনেই তাঁর মনে হল, স্বর্ণকার তাঁকে ঠকায়নি তো? ওটা খাঁটি সোনা দিয়েই কি তৈরি, না কি ওতে ভেজাল মেশান আছে?

যেমনি ভাবা অমনি কাজ। দেশের সেরা পণ্ডিত ও বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসকে অনুরোধ করলেন এই সমস্যার সমাধান করতে। মুকুটটি না ভেঙে বলতে হবে ওতে ভেজাল আছে কিনা।

অনেক ভেবেও আর্কিমিডিস কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না। দিনের পর দিন যায়, আর্কিমিডিসও ভাবছেন কীভাবে রাজার প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায়। 

একদিন আর্কিমিডিস একটা বড় পানির টবে নামলেন গোসলের জন্যে। অমনি খানিকটা পানি টব থেকে উপচে পড়ল। 

পানিতে নেমে আর্কিমিডিসের মনে হল তাঁর শরীরের ওজন যেন অনেকটা হালকা হয়ে গেছে! কেন এমন হল? 

Eureka Archimedes (আর্কিমিডিস)
ইউরেকা...


আমরা যে ঘটনাকে খুব সাধারণ বলে মনে করি তা থেকেই আর্কিমিডিস এক মস্ত বড় আবিষ্কার করে ফেললেন।

তিনি বুঝতে পারলেন, কোনো বস্তুকে পানিতে ডোবালে বস্তুটা কিছু পরিমাণ পানি সরিয়ে দেয়। যে পরিমাণ পানি বস্তুটি সরায়, সেইটুকু পানির যত ওজন, বস্তুটির ওজন ঠিক ততটা কমে যায়। 

তাঁর মাথার মধ্যে এটা খেলে গিয়েছিল বলেই তিনি 'ইউরেকা' বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে তিনি রাজার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছেন।

আর্কিমিডিস এরপর মুকুটটি এবং একই ওজনের খাঁটি সোনা পানিতে ডুবিয়ে দেখলেন। মুকুটটি খাঁটি সোনার তৈরি নয়। স্বর্ণকারকে ডাকা হল। সে তার দোষ স্বীকার করল।


এটাই আর্কিমিডিসের সবচাইতে বড় আবিষ্কার। তবে এ ছাড়াও কতকগুলো যন্ত্রও তিনি তৈরি করেছিলেন। 

তিনি খুব শক্তিশালী এক রকম আতশ কাচ তৈরি করেছিলেন যা সূর্যরশ্মিতে ধরে অনেক দূরের জিনিসেও আগুন ধরিয়ে দেয়া যেত।

 এই আতশ কাচ দিয়েই সিরাকিউসের রাজার অনুরোধে একবার তিনি রোমানদের যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। 

রোমানরা সিরাকিউস আক্রমণ করতে এসেছিল। সেই আক্রমণ এভাবেই ব্যর্থ হয়ে যায়।

তিনি গণিত আর জ্যামিতিতে সুপণ্ডিত ছিলেন। পড়াশুনো করার সময় কোনো দিকেই তাঁর খেয়াল থাকত না। 

একবার জ্যামিতির একটা জটিল প্রশ্ন নিয়ে একমনে ভাবছিলেন তিনি। দেশে তখন রোমান আক্রমণ চলছে। 

রোমান সৈন্যরা তাঁর ঘরে ঢুকে পড়ে এবং তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করে। তিনি তখন জ্যামিতিতে এতই ডুবে রয়েছেন যে, কোনো জবাবই দিলেন না। 

সৈনিকরা তাঁকে হত্যা করে চলে গেল। এভাবে খ্রিস্টপূর্ব ২১২ অব্দে সেকালের এক শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতের মৃত্যু হল।


Source: 

আর্কিমিডিস (Archimedes)


Post a Comment

0 Comments