বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন আছে। এই নিদর্শনগুলো থেকে আমরা অতীতের সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারি। আমাদের আজকের আলোচনা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন বিষয়ে।
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন
মহাস্থানগড়
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে পরবর্তী পনেরো শত বছরের বেশি সময়কালের বাংলার ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে এই নিদর্শন। মৌর্য আমলে এই স্থানটি ‘পুণ্ড্রনগর’ নামে পরিচিত ছিল। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত।এখানে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে :
- চওড়া খাদবিশিষ্ট প্রাচীন দুর্গ
- প্রাচীন ব্রাহ্মী শিলালিপি
- মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ভগ্নাবশেষ
- পোড়ামাটির ফলক, ভাস্কর্য, ধাতব মুদ্রা, পুঁতি
- ৩.৩৫ মিটার লম্বা ‘খোদাই পাথর’
![]() |
চিত্র : উয়ারী-বটেশ্বরের নিদর্শনসমূহ |
পাহাড়পুর ও ময়নামতি
পাহাড়পুর
এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ৭৮১-৮২১ খ্রিষ্টাব্দে পাল রাজা ধর্মপালের শাসনামলে নির্মিত হয়। পাহাড়পুর রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। এখানে ২৪ মিটার উঁচু গড় রয়েছে, এটি ‘সোমপুর মহাবিহার’ নামেও পরিচিত।এই চমৎকার বৌদ্ধ বিহারের চারপাশে ১৭৭টি ভিক্ষুক আছে। এছাড়া এখানে মন্দির, রান্নাঘর, খাবার ঘর এবং পাকা নর্দমা আছে। এখানে পাওয়া গেছে জীবজন্তুর মূর্তি ও টেরাকোটা।
![]() |
চিত্র : পাহাড়পুর |
ময়নামতি
অষ্টম শতকের রাজা মাণিক চন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির কাহিনী এই জায়গার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে কুমিল্লা শহরের কাছে ময়নামতি অবস্থিত।এটি বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। তবে এখানে হিন্দু ও জৈন ধর্মেরও নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
এখানকার অন্যান্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জীবজন্তু অঙ্কিত পোড়ামাটির ফলক, যেমন বেজির সঙ্গে যুদ্ধরত গোখরা সাপ, আগুয়ান হাতি ইত্যাদি। এখানকার জাদুঘরে বিভিন্ন মুদ্রা ও পাথরের ফলকের নিদর্শনও আছে।
![]() |
চিত্র : ময়নামতি |
সোনারগাঁও ও লালবাগ কেল্লা
সোনারগাঁও
সোনারগাঁও ও লালবাগ কেল্লা সতের শতকের ঐতিহাসিক নিদর্শন। সোনারগাঁও ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। সোনারগাঁও প্রাচীন বাংলার মুসলমান সুলতানদের রাজধানী ছিল।এখনও সেখানে সুলতানি আমলের অনেক সমাধি রয়েছে, যার একটি গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের মাজার। ১৬১০ সালে এক যুদ্ধে ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ পরাজিত হওয়ার পর সোনারগাঁও এর পরিবর্তে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করা হয়।
উনিশ শতকে হিন্দু বণিকদের সুতা বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে এখানে পানাম নগর গড়ে ওঠে। সোনারগাঁও-এর গৌরব ধরে রাখার জন্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ১৯৭৫ সালে এখানে একটি লোকশিল্প জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। লোকশিল্প জাদুঘরটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
![]() |
চিত্র : সোনারগাঁও লোক শিল্প জাদুঘর |
লালবাগ কেল্লা
ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ১৬৭৮ সালে লালবাগ কেল্লা নির্মাণ করা হয়। আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মোহাম্মদ আযম শাহ্ এই দুর্গটির নির্মাণ কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। দুর্গটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি।দুর্গের মাঝখানে খোলা জায়গায় মোঘল শাসকগণ তাঁবু টানিয়ে বসবাস করতেন। দুর্গের দক্ষিণে গোপন প্রবেশপথ এবং একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ রয়েছে। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
![]() |
চিত্র : লালবাগ কেল্লা |
আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নির্মিত বাংলার নবাবদের রাজপ্রাসাদ। মোঘল আমলে জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ এনায়েতুল্লাহ্ এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।আঠারো শতকে তাঁর পুত্র শেখ মতিউল্লাহ প্রাসাদটিকে বণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের উদ্দেশে ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। ১৮৩০ সালে খাজা আলিমুল্লাহ্ ফরাসিদের নিকট থেকে এটিকে ক্রয় করে আবার প্রাসাদে পরিণত করেন।
এই প্রাসাদকে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল গণি একটি প্রধান ভবন নির্মাণ করেন। তিনি তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে ভবনটির নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল।
![]() |
চিত্র : আহসান মঞ্জিল |
Conclusion:
১৮৮৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে এবং ১৮৯৭ সালের ভুমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামতও করা হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রাসাদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এর প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হয়।এই প্রাসাদে রয়েছে লম্বা বারান্দা, জলসাঘর, দরবারহল এবং রংমহল। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন।
Last Line: বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন
0 Comments